বাবা বড়ো কাছারী মন্দির আর তার ইতিহাস | Baba Boro Kachari Mandir | Places To Visit In Kolkata

সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয়ের আরো এক রূপ দেবাদিদেব মহাদেব । সনাতন ধর্মের সর্বময় কর্তা তিনি , তিনি জন্মরহিত, শাশ্বত, সর্বকারণের কারণ; তিনি স্ব-স্বরূপে বর্তমান, সমস্ত জ্যোতির জ্যোতি; তিনি তুরীয়, অন্ধকারের অতীত, আদি ও অন্তবিহীন।

Baba Boro Kachari Temple History Know Your Planet Youtube


ধর্মের প্রতি মানুষের অগাধ বিশ্বাস জন্ম দিয়েছে নানা তীর্থক্ষেত্রর। শুধু আজ নয় , বহুকাল আগে থেকেই এই ধর্মের প্রতি টান , ভারতের বুকে জন্ম দিয়েছে বহু মন্দিরের। তেমনি একটি মন্দির রয়েছে এই বাংলার বুকে , যা বাবা বড়ো কাচারী নামে পরিচিত। এই মন্দিরে মানত করে পুজো দিলে নাকি সব মনোস্কামনাই পূর্ণ  হয়। ২৫০ বছরের পুরোনো বাবা বড়ো কাছারির মহিমা শুনলে সবাই শিউরে ওঠেন।   

Baba Boro Kachari Temple History Know Your Planet Youtube


দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাখরাহাট , মহানগরীর সীমান্ত হলেও , একটা গ্রাম্য পরিবেশের ছোয়া আছে। সদর আমতলার অদূরে সাধারণ এক গ্রাম, নাম ঝিকুরবাড়িয়া। এখানেই আছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার দ্বিতীয় বৃহত্তম তীর্থ শ্রী শ্রী বাবা বোরো কাচারীর মন্দির। 

Baba Boro Kachari Temple History Know Your Planet Youtube


দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থিত এই মন্দির। এই মন্দিরের ইতিহাস বড়োই অলোকিক। কিন্তু কেন বাবা বড়ো কাচারী এত জাগ্রত , কি তার ইতিহাস , কিভাবেই বা যাবেন।  আসুন শুনে নি। 


বড়ো কাচারী কথাটির অর্থ হলো বড়ো কোর্ট বা আদালত। এটির আরো একটি নাম ভুতের কাচারী , এখানে শিব পরিচিত ভূতনাথ হিসাবে। 


মন্দিরটি অবস্থিত একটি বড়ো অশত্থ গাছের নিচে। আর গাছটির গোড়াতেই রয়েছে একটি শিব লিঙ্গ। বাবা ভুতনাথের কাছে মানত করে নিজের প্রার্থনা জানিয়ে , মনোস্কামনা পূরণ হয়নি , এমন কথা শোনাই যায় না। 

Baba Boro Kachari Temple History Know Your Planet Youtube


এই মন্দিরের ইতিহাস ঘিরে রয়েছে এক অলোকিক রহস্য। জনশ্রুতি আছে বাংলার নবাব আলীবর্দী খানের শাসনকালের  শেষ সময়  , অর্থাৎ ১৭৫৫ সালের সময়কালে ভাস্কর পন্ডিতের নেতৃত্বে মারাঠা বর্গীরা আক্রমণ  করেছিল সারা বাংলা জুড়ে । তাদের উৎপাতের  দৌরাত্বে স্থানীয় গ্রামের লোকজন এবং দুর্দশাগ্রস্ত চাষীরা বাধ্য হয়ে কাছের একটি জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। জঙ্গলটি আদপে ছিল একটি স্মশান। চারদিকে কাস আর ঘন রাম চিতার বন।


বহু বছর আগের কথা , তখন এই স্থান টা বাওয়ালি ও সুতানটি গোবিন্দপুরের জমিদার সাবন্ন রায় চৌধুরীদের যৌথ তালুকের মধ্যে ছিল। সেই সময় থেকেই শোনা যায় এই বড়ো কাছারির নাম। প্রচলিত আছে , স্বয়ং ভূতনাথ সেই স্মশানে বিচার সভা বসাতেন। তাই তখন থেকে এই স্থানটির নাম হয় ভুত কাচারী। 


কালক্রমে  ভূতনাথ শিবের বিচার সভাই সর্বশ্রেষ্ট হিসাবে প্রসিদ্ধি  লাভ করে , আর স্থানটির নাম হয় বড়ো কাচারী। 


তার কিছুকাল পরে এক সাধু জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাবার সময় , এই স্মশানে আশ্রয় নেয়। আর তার পর থেকেই স্থানীয় মানুষজন , নানান ভাবে উপকৃত হতে থাকে। তিনি বাকসিদ্ধ ছিলেন। তাই মানুষের  ধারণা হয় , যে তিনি স্বয়ং ভূতনাথ। এর পর থেকে এই স্থানের প্রচুর উন্নতি হয়। তারপর সেই বাকসিদ্ধ সাধুর মৃত্যু হলে দুঃখের ছায়া নেমে আসে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে। ভক্ত বা সাধুর মরদেহকে না পুড়িয়ে সমাধিস্থ করা হয় এই স্মশানে। আর সেই স্থান টিকে তারা পুজো করতে থাকেন। 


এটা সত্য ঘটনা হোক, অলৌকিক হোক বা কাকতালীয় ব্যাপার হোক , ওই সাধুর সমাধি ক্ষেত্র থেকে একটা অশত্থ গাছ বেরোয়। এবং লোকের ধারণা জন্মায় যে এটা সাধুরই প্রতিমূর্তি। এরপর থেকেই এই জায়গাটি পূজিত  হতে থাকে ভুতনাথের কাচারী হিসাবে। এবং স্থানীয় মানুষরা যা কামনা বাসনা জানাতো গাছটার কাছে , অদ্ভুতভাবে সব মনোস্কামনা  পূর্ণ হতে থাকে। ছড়িয়ে পরে স্থানটির মাহাত্ম। 


৭৮ এর বন্যায় ঝিকুরবাড়িয়া গ্রামটি অদ্ভুত ভাবে রক্ষা পেলেও , রক্ষা পায়নি  অশত্থ গাছটি। প্রচন্ড ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গাছটি নষ্ট হয়ে যায়। গ্রামবাসীদের ইচ্ছায় একই ভাবে আরো একটি অশত্থ গাছ স্থাপন করা হয়। গাছটিকে ঘিরে তৈরী হয় বেদি , যা আজ মন্দিরের চেহারা নিয়েছে। 


বহুদূর থেকে মানুষ আসে বাবা বড়ো কাছারির কাছে পুজো দিতে ও মনের কথা জানাতে । ভক্তরা মনোস্কামনা একটা ছোট দরখাস্তে লিখে মন্দিরের গা এ বেঁধে দেন । বাবা বড়ো কাছারির কৃপায় এখনো মানুষ দুঃখ কষ্ট থেকে রেহাই পান। 


এখানে কোনো পান্ডা নেই , তাই ভক্তরা নিজেরাই মন্দিরের পূজারীর কাছে ডালা দিয়ে পূজা দিতে পারেন। মন্দির সংলঙ্গ দুধপুকুরে স্নান করে দন্ডি কেটে পূজা দেন অনেক ভক্ত। বড়ো কাছারির মাহাত্ম , নিস্সন্তানদের সন্তান লাভের ইচ্ছে পূরণ করবার জন্য। এছাড়াও জমিজমা সংক্রান্ত সমস্যা , অসুখ , প্রেমে বাধা , এবং বিয়ে না হওয়া , এই সবের জন্য এখানে লোকে পুজো দিয়ে আসে। আর বাবার আশীর্বাদের ফল মিলতেই ভক্তরা গোপাল দিয়ে পুজো দেন এই মন্দিরে। 


প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে ধুমধাম করে পুজো হয়। চৈত্র মাসের শেষ তিনদিন এখানে গাজন ও নীল উৎসব পালিত হয়। খুব ভিড় হয় মন্দির চত্বর , আর সেই ভাবেই সেজেও উঠেছে বিভিন্ন দোকান পাঠ।   

Baba Boro Kachari Temple History Know Your Planet Youtube


সময়ের সাথে জঙ্গল আজ জনপদ। সেই স্মশান আজ শহরতলিতে বদলে গেছে। কিন্তু রয়ে গেছে বাবার প্রতিরূপ , সেই অশত্থ গাছ। গভীর রাতে সেখানে আজ ও শিবশম্ভু বাবা ভুতনাথের বিচার সভা বসে। সব মিলিয়ে এই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাবা বড়ো কাচারী বা ভুত কাচারী খুব প্রসিদ্ধ ও জাগ্রত।

 

🔴 এখানে আসবেন  কিভাবে?

কলকাতার PTS থেকে প্রায় ২৫ কিমি দূরত্বে অবস্থিত বোরো কাচারীর মন্দির । ডায়মন্ড  হারবার  রোড  ধরে  বেহালা  পেরিয়ে , ঠাকুরপুকুর থেকে ডান দিকের রাস্তাটা ঠাকুরপুকুর বাজার হয়ে  প্রায় ১৪ কিমি গেলেই  পৌঁছে যাবো বাবা বড়ো কাচারীর  মন্দিরে। বিবিরহাট হয়ে  যখন  বাখরাহাটে   প্রবেশ  করবেন  তখন  একটা তোরণের পেরিয়ে বাখরাহাট  স্কুলের পাশ দিয়ে চলে  আসবেন  এখানে। 

Baba Boro Kachari Temple History Know Your Planet Youtube


নয়তো ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে আমতলা পৌঁছে সেখান থেকে বিবিরহাট হয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় বাবা বড়ো কাচারীর মন্দিরে। 

PTS থেকে ডাইরেক্ট বাস পেয়ে যাবেন বাখরাহাট আসার  , সেখান থেকে হেটে বা অটো তে পৌঁছে যাবেন মন্দিরে।  নয়তো ঠাকুরপুকুর বাজার থেকে বা আমতলা থেকেও বাখরাহাট আসার অটো পেয়ে যাবেন। 

 #baba_boro_kachari #history #south_24_parganas #pilgrims #places_to_visit_in_kolkata

নিচের ভিডিওটি দেখুন , আসা করি ভালো লাগবে



0 Comments