"মা তুই এত উঁচু, তোকে মালা পড়াতে পারিনা" - লোকমুখে শোনা কথা । একটা সময় ছিল, যখন হাওড়া জেলার মাকড়দহের মাকড়চন্ডী মা অনেক লম্বা ছিল । সেই সময় যিনি মায়ের পূজা করতেন মা এর লম্বা মূর্তির জন্য মালা পড়াতে পারতেন না । তখন তিনি মাকে বলেন কথাটা । সেই কথা শুনে মা ক্রমশ মাটির মধ্যে প্রবেশ করতে শুরু করলে , সেই ব্রাম্ভন মাকে জড়িয়ে ধরেন , এবং মা কে পাতালে প্রবেশ করতে বাধা দেন । সেই কারণে বর্তমানে আমরা মা এর এই ছোট মূর্তি দেখতে পাই ।
দোল পরবর্তী সময়ে অনেক জায়গা পঞ্চম দোল উৎসবে মেতে ওঠে। তার মধ্যে অন্যতম কিন্তু এই মাকড়দাহের পঞ্চম দোল। এই বছরেও শুরু হয়েছে এই উৎসব , তবে প্রতিবারের মতো সেই আড়ম্বর নেই এবারে। কিন্তু মন্দির প্রাঙ্গন সেজে উঠেছে আগের মতোই। তবে বাজি পোড়ানো , ভোগ খাওয়ানো বন্ধ আছে এবারে।
মাকড়চন্ডী মন্দির স্থাপনের পিছনে অনেক লোকমুখের কাহিনী আছে। মনে করা হয় কোনো এক সওদাগর এই মন্দির প্রতিষ্টা করেন। এই দেবীরও নামের উৎস নিয়ে মতানৈক্য আছে। কেউ বলেন মার্কন্ডেয় পুরাণের চণ্ডী থেকে এই মাকড়চণ্ডী নাম। আবার কারও মতে সরস্বতী নদীর তীরে অবস্থিত এই অঞ্চল প্রচুর মকর অর্থাৎ কুমীর ছিল। নদীপথে সওদাগররা মকরের উৎপাত থেকে বাঁচতে মকরচণ্ডীর পুজো প্রবর্তন করেন। যা পড়ে মাকড়চণ্ডী নাম দেয়।
মনে করা হয় আসল মন্দিরটি তৈরী করেন শ্রীমন্ত সওদাগর। সেই সময় সরস্বতী নদী পথে বাণিজ্যে যাবার পথে স্বপ্নাদেশ পান এই মন্দির নির্মাণের। তিনটি প্রস্তরখন্ড দেখে মনে করা হয় , ঐগুলো পুরানো মন্দিরের অংশবিশেষ।
তবে বর্তমানের মূল মন্দিরের সঙ্গে নাটমন্দির, শিবমন্দির এবং মায়ের ঘাট নির্মাণ করান মাহিয়াড়ি মৌরির জমিদার রামকান্ত কুণ্ডুচৌধুরি। তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দির নির্মাণ করেন ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে। তবে এর পরেও ৪০ ফুট উঁচু মন্দিরটি সংস্কার করা হয়।
একখণ্ড গোলাকার পাথরের খণ্ডকেই দেবীরূপে কল্পনা করা হয়। কার্তিক মাসে কালীপুজো হয় এই মন্দিরে। মাকড়চণ্ডী মূর্তিতেই কালীপুজোর সমস্ত নিয়ম কঠোরভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয়। মাঝরাতে পুজো, ভোগের ব্যবস্থা সবই থাকে। মন্দির সেজে ওঠে আলোকমালায়। বাজি পোড়ানোর আনন্দে মেতে ওঠেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, 'এমনও একসময় ছিল, যে সময় পুজোর ঢাকের আওয়াজ যতদূর পর্যন্ত পৌঁছত ততদূর পর্যন্ত কোনও পুজো হত না। কিন্তু কালের স্রোতে সে নিয়ম বদলে যায়। তবে এখনও আশেপাশের যাঁরাই দুর্গা বা কালী পুজোর ব্যবস্থা করেন তাঁরা মন্দির থেকে অনুমতি নিয়ে যান।'
অবস্থান: মাকড়দহ, হাওড়া। হাওড়া থেকে বা কলকাতা থেকে ডোমজুড়গামী যেকোনো বাস এ আসা যায় এই মন্দিরে।
#makarchandi_mandir #pancham_dol_2021 #knowyourplanet #lmakarchandi_mandir #places_to_visit_in_kolkata #offbeat_places_in_kolkata #makardah
0 Comments
Thank You for comments in Know Your Planet. I'll be in touch with you shortly.