পৌরাণিক মতে সৃষ্টি ও ধ্বংসের প্রতীক মহাদেব। আর মহাদেব শিবের মন্দির ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় থাকলেও , কলকাতার এক বিশেষ বৈশিষ্ট আছে। কলকাতার দক্ষিণে খিদিরপুর ভারতের পুরাতন নদী বন্দরগুলোর মধ্যে একটি। বহু প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষীও বহন করে চলেছে এই খিদিপুরই । আর সেই খিদিরপুর এর কালিবাগান এই আছে প্রাচীন দুটি শিব মন্দির। আর সেই মন্দিরের শিব লিঙ্গ ভারতবর্ষের উচ্চতম শিবলিঙ্গ , যা কিনা একটি মাত্র কষ্টি পাথরকে খোদাই করে তৈরী।
খিদিরপুর ট্রাম ডিপো এর কাছে অবস্থিত হবার জন্য হেস্টিংস বা খিদিরপুর থেকে কার্লমার্কস সরণি বা খিদিরপুর রোড ধরে চলে আসতে পারেন এখানে। সেখানে বাম হাতে দেখতে পাবেন নব নির্মিত তোরণ।
তোরণের মধ্যে দিয়ে ভূকৈলাস রোড ধরে এলে প্রথমে পর্বে নহবতখানা , আর তারপর পড়বে প্রায় ২৫০ বছরের পুরানো শিব মন্দির ও ভূকৈলাশ ঘোষাল রাজবাড়ী।
প্রায় ১০৮ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত ছিল এই মন্দির ও রাজবাড়ী। রাজাবাহাদুর জয়নারায়ণ ঘোষাল ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে একটি পুকুর আর দুটি আটচালা ত্রিখিলানযুক্ত শিবমন্দিরের যথাক্রমে খননকার্য ও স্থাপনা করেন। এই পুকুরটির নাম রাখা হয় শিবগঙ্গা আর দুটি শিব মন্দিরের নাম রাখেন তার মাতা ও পিতার নামে, রক্তকমলেশ্বর ও কৃষ্ণচন্দ্রেশ্বর।
কৃষ্ণচন্দ্রেশ্বর মন্দিরের শিবলিঙ্গটি , রক্তকমলেশ্বর মন্দিরের থেকে বড়, এবং উচ্চতায় প্রায় ১৮ ফুট। দুই মন্দিরের মাঝে আছে মহাদেবের বাহন নন্দীর মূর্তি।
প্রায় কালের গর্ভে বিলীন হতে থাকা এই মন্দিরকে ২০১৩ সালে পুননির্মাণ করা হয়। তবে সেই পুরানো শিল্পকর্ম সেভাবে দেখা না গেলেও , রক্তকমলেশ্বর মন্দিরের ভিতরের দেয়ালের গায়ে পঙ্খের কাজ চোখে পরে। মন্দির সংস্কারের পর , শিবগঙ্গাকে ঘিরে ৬ টি ছোট মন্দিরেরও স্থাপনা করা হয়েছে।
এরপর রাজবাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করলে বাম হাতে পড়বে ছাদবিহীন নাচঘর আর ডান হাতে শ্রী শ্রী পতিতপাবনী দূর্গা মন্দির। ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে জয়নারায়ণ ঘোষাল দিল্লির বাদশার কাছ থেকে রাজাবাহাদুর খেতাব পাবার পর রাজবাড়ীর কুলদেবীর প্রতিষ্টা করেন।
এই মন্দিরের গঠনশৈলী অনেকটা গ্রিক , মুসলিম ও হিন্দু স্থাপত্য রীতির মিশেলে তৈরী। এছাড়াও এখানে আরো ৪ টি মন্দির আছে , এমনকি ২ টি কামানও রাখা আছে।
মন্দিরের ভিতরের গাত্রে তামার ফলকে ইংরেজি ও পারসী ভাষায় জয়নারায়ণ ঘোষালের জীবনকাহিনী লেখা থাকলেও , তা এখন পড়ার অযোগ্য। তবে আরো একটি ফলকে বাংলায় বর্ণনা করা আছে।
শিবমন্দির প্রতিদিন সকাল ৭ টা থেকে দুপুর ১২ টা এবং ৩ টা থেকে রাত ৯ টা অব্দি খোলা থাকে। আর সন্ধে বেলা এলে পতিতপাবনী দূর্গা মন্দির এ আরতিও দেখতে পাবেন। তবে শিবের মন্দিরে পুজো দিতে হলে শিবরাত্রির দিনে আর শ্রাবন মাসের প্রতি সোমবারে দেয়া যাবে। এখানে শিবরাত্রি উপলক্ষে একমাস ব্যাপী মেলাও চলে।
#bhukailash_shiva_temple #tallest_shiv_linga_in_india #places_to_visit_in_kolkata
সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্রটি দেখতে
0 Comments
Thank You for comments in Know Your Planet. I'll be in touch with you shortly.